রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩২ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কক্সবাজারে করোনার টিকা নিতে সাধারণ মানুষের মাঝে সাড়া নেই

আবদুল আজিজ:
কক্সবাজারে প্রথম দফায় ৮৪ হাজার ডোজ করোনার টিকা পৌছেছে। এসব টিকা যথাসময়ে প্রয়োগের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এজন্য সপ্তাহ ব্যাপী প্রশিক্ষণও চলছে। প্রতিটি উপজেলা থেকে ৫জন করে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনকে প্রশিক্ষণার্থী হিসাবে রাখা হয়েছে। তবে করোনা টিকার বিষয়ে কক্সবাজারে কোন ধরণের প্রচার-প্রচারণা না থাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে নেই কোন আগ্রহ। অবশ্য, সিভিল সার্জন বলছেন, সরকারি নিয়মানুযায়ী আগে যারা টিকা পাবেন মুলত: তাদেরকে টিকা প্রয়োগ করা হবে। এজন্য বেশী প্রচারণার প্রয়োজন নেই। পর্যায়ক্রমে সব পেশার মানুষদের যখন টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত আসবে তখন বেশী প্রচারণার প্রয়োজন হবে।

গত ৩১ জানুয়ারি সকালে কক্সবাজারে করোনার টিকা পৌছার পর থেকে তেমন কোন আগ্রহ নেই মানুষের কাছে। বিশেষ করে গ্রামীন পর্যায়ে করোনার কথা ভুলতে বসেছে। শহর এবং গ্রামে জনজীবন স্বাভাবিক গত দুই মাস ধরে। কক্সবাজারের অধিকাংশ মানুষ করোনাকালিন সময়ে সরকার যে বিধি-নিষেধ চালু করছিল, সেসব বিধি-নিষেধ মানছে না। এমনকি মুখে মাস্ক দিতেও দেখা যাচ্ছে না মানুষের মাঝে। এছাড়াও করোনা নিতে যে সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধনের কথা বলা হয়েছে তা অনেকের কাছে জটিল মনে হচ্ছে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ জানেন না কিভাবে অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। এজন্য করোনার টিকার তেমন কোন আগ্রহ নেই বলে মনে করছেন অনেকেই।

জানতে চাইলে কক্সবাজার প্রেসক্লাব ও কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো: আবু তাহের কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘করোনার টিকা তো আমি নিজে নিতে চাই। তবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তো সাংবাদিকদের ব্যাপারে কোন ধরণের গাইড লাইন দেয়নি। আমি মনে করি যেসব সাংবাদিক মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে এবং তাদের ক্যামরাম্যান থেকে শুরু করে এধরণের সাংবাদিকদের করোনার টিকা নেয়া উচিত। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অ্যাপে নিবন্ধন সাধারণ মানুষের জন্য একটু কঠিন হয়ে পড়েছে।’

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘করোনার টিকা কক্সবাজারে এসেছে বলে শুনেছি। কিন্তু, কিভাবে নিতে হবে সে ব্যাপারে আমাদের মাঝে ধারণা নেই। তবে আমি নিজে করোনার টিকা নিব না। কারণ, করোনার টিকা নিতে পার্শ্বপ্রক্রিয়া কি হয় সেটি আগে দেখতে হবে। আগে যাদের জন্য টিকা এসেছে তাদের প্রয়োগ করা হউক।’

তিনি গ্রামীন জনপদের মানুষের উদ্ধৃতি দিয়ে মন্তব্য করে বলেন, ‘করোনার টিকার বিষয়ে গ্রামের মানুষের মাঝে কোন ধরণের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এছাড়াও অ্যাপে নিবন্ধন অনেকটা ঝামেলা মনে হচ্ছে। এমনিতে গ্রামের মানুষ করোনা বিশ্বাস করে না, সেখানে করোনা টিকা নেয়ার মত তাদের মধ্যে আগ্রহ নেই’।

কক্সবাজার ঝিনুকমালা খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক দীপক শর্মা দীপু কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, করোনাকালিন সময়ে কক্সবাজারে ডাক্তার, নার্সের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলো সোচ্চার ছিল। কিন্তু, দু:খের বিষয় কক্সবাজার সাংস্কৃতি সংগঠনের কোন সদস্যকে টিকা প্রয়োগের আওতায় আনা হয়নি। কারণ, করোনার সময়ে মানুষের সেবায় সাংস্কৃতি সংগঠন গুলো মাঠে ছিল। একারণে আমি নিজেও করোনায় আক্রান্ত একজন মানুষ। তাই, আমাদের কথা গুলো মাথায় রাখা উচিত ছিল।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা: মাহবুবুর রহমান কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘গত রোববার ৮৪ হাজার ডোজ করোনার টিকা কক্সবাজারে পৌছেছে। প্রতি ভায়েলে ১০টি ডোজ। এক ডোজে ১০জন করে টিকা প্রয়োগ করা যাবে। প্রথম দফায় আসা টিকা গুলো প্রথম ডোজ হিসাবে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, পুলিশ ও মাঠ পর্যায়ে কর্মরতদের শরীরে প্রয়োগ করা হবে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সরকারী নির্দেশনা পেলে করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হবে’।

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু এখনো বেশী টিকা কক্সবাজারে আসেনি যেহেতু প্রচারণা চালানোর সময় এখনো আসেনি। সময় হলে সাধারণ মানুষের কাছে করোনা টিকার সবকিছু জানানো হবে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের পর স্ব-স্ব উপজেলা সমুহে করোনার টিকা ফ্রিজারে করে পাঠানো হবে।’

রেজিষ্ট্রেশনের পর টিকা পাওয়ার বিষয়ে ডা: মাহবুবুর রহমান কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, এখনো টিকা প্রয়োগ শুরু হয়নি আগে শুরু হউক পরে সব জানতে পারবেন। তবে অ্যাপে রেজিষ্ট্রেশন করে খুব সহজে চিকিৎসক, নার্স, পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা, বিরঙ্গণাদের দ্রুত করোনার টিকা দেয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। শুধু অ্যাপে নিবন্ধন করলেই হবে। এক্ষেত্রে কোন ধরণের শারিরীক পরিক্ষা করা হবে কিনা সে বিষয়ে এখনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, করোনার টিকা সবেমাত্র পৌছেছে এতে কে আগে পাবেন কে পাবেন না সে বিষয়ে কোন ধরণের চাপ নেই। রাজনৈতিকভাবে কোন প্রভাব নেই।

ডা:মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রথম ধাপে ৮৪ হাজার ডোজ করোনা টিকা গুলোর মধ্যে ১২ হাজার ডোজ উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সেবায় যারা কাজ করছে তাদের মধ্যে প্রয়োগ করা হবে। বাকি ৭২ হাজার করোনার টিকা কক্সবাজারবাসির মধ্যে প্রয়োগ করা হবে’।

উল্লেখ্য, গত রোববার (৩১ জানুয়ারি) সকালে কক্সবাজার জেলায় পৌছেছে ৮৪ হাজার করোনা ভাইরাসের টিকা। ওইদিনই বেক্সিমকো ফার্মার একটি কাভার্ড ফ্রিজার ভ্যানে করে কক্সবাজার জেলা ইপিআই সেন্টারে টিকা নিয়ে কাভার্ড ভ্যানটি এসে পৌছালে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা মাহবুবুর রহমান এই টিকা গ্রহন করেন। এসময় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেলা ইপিআই এর কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা: মাহবুবুর রহমান কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড এ্যাস্ট্রাজেনের টিকা কোভি শিল্ড কক্সবাজারে আনা হয়েছে। সকালে আসা ৮৪ হাজার টিকা জেলার ৪২ হাজার জনকে দুই ডোজ করে দেয়া হবে। এরমধ্যে ৬ হাজার জন রয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত সরকারি বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি। তবে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় আশ্রিত ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য করোনা ভাইরাসের টিকা প্রদানের সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।

সিভিল সার্জন জানান এই টিকা দেয়ার জন্য আজ রবিবার থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আগামী চার দিন তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এই পর্যায়ে যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে তারা উপজেলায় গিয়ে সেখানকার টিকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবে।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল ও প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে করোনা ভাইরাসের এই টিকা প্রদানের সেন্টার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারি সারাদেশের মতো কক্সবাজার জেলায় আনুষ্ঠানিক ভাবে টিকা প্রদান কর্মসূচি শুরু হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রী এই টিকা প্রদান কর্মসূচি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করবেন বলে তিনি জানান।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION